বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১১

উদ্ভট / আলমগীর কবীর বাবলু

সকালে হাঁটা সাস্থের জন্য উত্তম, উৎকৃষ্ট -কথাটা মকবুল মৃধা মনে-প্রাণে মানে এবং বিশ্বাসও করে। আর বিশ্বাস করে বলেই সে রোজ এই শরীরবিদ্যার কম্মটি নিয়মমত পালন করে। আজও ভোরে সে হাঁটার শ্রমসাধন কম্মটি সারছিল। কিন্তু শহীদ মিনারের কাছে এসেই মকবুল থমকে দাঁড়াল বা দাঁড়াতে বাধ্য হল। কেননা শহীদ মিনার চত্বর তখন লোকে লোকারণ্য। কুড়িগ্রামের সকল ‘সেলিব্রেটি’-ই সেখানে সমাগত। তারা সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি কিংবা বাঙালিয়ানা পোশাক পরে, মাটির সানকিতে করে সরষে-ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার মোচ্ছবে মেতেছে। প্রথমে ব্যাপারটা ঠিকমত ঠাওর করতে না পারলেও শহীদ মিনারের চূড়ায় উড্ডীন বিশাল ব্যানারে ‘বাঙলা বর্ষবরণ উৎসব-১৪১৮’ লেখাটি দেখে সে ঠিকই বিষয়ের মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারল। কিন্তু এভাবে বাঙলা বর্ষ উৎযাপনের ঘটনাকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। বরং এটা এক ধরনের স্থুল পরিহাস বলেই তার চোখে চিত্রিত হল। বোধকরি এ পরিহাস দৈনন্দিন পান্তা খাওয়া কৃষক, শ্রমিক, মুটে-মজুরসহ দেশের আপামর হতদরিদ্র লোকদের সঙ্গে, কিংবা এ নিষ্ঠুর পরিহাস সারাবছর হিমাগারে তুলে রাখা বাঙলা সন-তারিখের সঙ্গে! কেননা, আজ যারা বর্ষবরণের নামে লোকদেখানো পান্তা খাচ্ছে, কিংবা ঘটা করে বাঙলা নববর্ষ পালন করছে, তারা কি নিয়মিত পান্তা খায় বা খাবে? পয়লা বৈশাখের পর তারা কি আদতে বাঙলা সন-তারিখের হিসাব রাখে বা রাখবে? তবে কেন এই লোকদেখানো উদ্ভট আয়োজন! উদ্ভট মঞ্চাভিনয়!

স্বল্পশিক্ষিত মকবুল মৃধা বাঙলা সন-তারিখ সম্পর্কে নিরীক্ষা করে দেখেছে, এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণি নয়, বরং ঘোর গ্রামের অশিতি দরিদ্র লোকেরাই বাঙলা সন-তারিখের সঠিক ও বিশদ হিসাব রাখে এবং যথাযথ পালন করে। বরই আফসোস, মাতৃভাষা বাঙলা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত হলেও এদেশের সকল ক্ষেত্রে সকল দিবস, যেমন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস প্রভৃতি বাঙলায় নয় আজও ইংরেজি তারিখেই পালিত হচ্ছে! তাহলে সর্বস্তরে বাঙলা ভাষার প্রয়োগ, প্রসার, প্রচলন ও ব্যবহার কিভাবে ঘটানো সম্ভব?

মকবুল মৃধা আর ভাবতে পরে না। তার মাথাটা ভীষণ গুলিয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন